সোমবার   ২৫ নভেম্বর ২০২৪ |  অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১ |   ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ

প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১৬ ০৪ ০২  

নজরুলের-স্মৃতিধন্য-ত্রিশালের-ঐতিহ্য-ও সৌন্দর্য-দেখার-আমন্ত্রণ

নজরুলের-স্মৃতিধন্য-ত্রিশালের-ঐতিহ্য-ও সৌন্দর্য-দেখার-আমন্ত্রণ

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ময়মনসিংহের ত্রিশাল। কিশোর নজরুলকে ত্রিশালে নিয়ে আসেন আসানসোলে কর্মরত কাজীর শিমলা গ্রামের দারোগা কাজী রফিজউল্লাহ।

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতী১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে নজরুলকে ত্রিশালে এনে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে (বর্তমান সরকারি নজরুল একাডেমি) সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন রফিজউল্লাহ দারোগা । বিদ্রোহী কবি নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের পরতে পারতে মিশে আছে নজরুলের নাম। এখনো যেন ত্রিশালময় নজরুল, নজরুলময় ত্রিশাল। 

নজরুলপ্রেমী, সাহিত্য ও কবিতাপ্রেমীদের ভ্রমণতালিকার শীর্ষে থাকে ময়মনসিংহের ত্রিশাল। নজরুলের স্মৃতিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়াও ভ্রমণপিয়াসীদের তৃষ্ণা মেটানোর যথেষ্ট দর্শনীয় স্থান ত্রিশালে রয়েছে। একদিনের ত্রিশাল ভ্রমণে যা যা না দেখলেই নয় তা নিয়েই আজকের আলোচনা। 

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতীকাজীর শিমলার নজরুল স্মৃতিকেন্দ্র: কবির স্মৃতি রক্ষার্থে কাজীর শিমলা গ্রামে ২০০৮ সালের ২৫ আগস্ট  প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই স্মৃতিকেন্দ্রটি। এখানে ঢুকেই দেখা যাবে নজরুল পাঠাগার। নজরুলের নিজের হাতে লেখা বই, নজরুলকে নিয়ে রচনা, সমালোচনা এবং গবেষণা প্রবন্ধের বিশাল সমাহার রয়েছে এখানে। নজরুলের গানের রেকর্ডও আছে। নজরুল যে ঘরটিতে ছিলেন সেটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষবাগান, যার প্রতিটি গাছের নামকরণ করা হয়েছে নজরুলের কবিতা-গানে উল্লিখিত গাছগুলোর নামে। নজরুলের ব্যবহৃত খাট, গোসলের পুকুরও আছে সংরক্ষিত। যে বটগাছের নিচে বাঁশি বাজাতেন কবি, সেই গাছও দেখে আসতে পারবেন । এখানে মাঝে মধ্যে কবি-সাহিত্যিকদের আড্ডার আসর বসে। সৌভাগ্য থাকলে সেটাও দেখে আসতে পারবেন।

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতীবিচ্যুতিয়া ব্যাপারীবাড়ির নজুরুল স্মৃতিকেন্দ্র: কবি নামাপাড়ার ব্যাপারীবাড়িতে জায়গীর থাকতেন। কাজীর শিমলার স্মৃতিকেন্দ্রটির সঙ্গে এটিও একই সময়ে নির্মাণ করা হয়। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়  স্মৃতিকেন্দ্র দুটি নির্মিত। এখানে কবির স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য একটি যাদুঘর, লাইব্রেরি এবং অডিটোরিয়াম নির্মান করা হয়েছে। যাদুঘরে কবির স্বহস্তে লিখিত বেশ কিছু দুর্লভ পান্ডুলিপি, কবির ব্যবহৃত কিছু দুস্প্রাপ্য সামগ্রী এবং কবির কর্মময় জীবনের বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র সরক্ষিত রয়েছে। এই স্থানটি শুধুমাত্র নজরুল গবেষক-ই নয় সাধারণ মানুষের জন্য ও একটি আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। দেশ বিদেশের খ্যাতিমান নজরুল গবেষক, শিল্পীগণ এবং তদুপরি দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ এই কেন্দ্রটি ভ্রমনে এসে বেশ কিছু গাছের চারা রোপন করেছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এখানে।

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতীসরকারি নজরুল একাডেমি: কিশোর নজরুলকে এনে এই স্কুলেই ভর্তি করান রফিজউল্লাহ দারোগা। স্কুলটির তৎকালীন নাম ছিল দরিরামপুর হাইস্কুল। ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডের পাশেই অবস্থিত স্কুলটি। প্রবেশ করা মাত্রই নজরে আসবে বিশাল মাঠ। মাঠের শেষে দৃষ্টিনন্দন নজরুল মঞ্চ। এই স্কুলমাঠেই প্রতিবছর আয়োজিত হয় নজরুল জন্মজয়ন্তী।  

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়: কবির স্মরণে তার স্মৃতিবিজরিত বটতলাতে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয় । কবি নজরুল ছোট বেলায় এই বটগাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাতেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ত্রিশাল উপজেলার নামাপাড়া এলাকায় অবস্থিত একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি জুড়ে রয়েছে নজরুলের আনাগোনা। পুরনো দুটি আবাসিক হলের নাম - অগ্নিবীণা ও দোলনচাঁপা। ক্যাফেটেরিয়ার নাম চক্রবাক। মেডিকেল সেন্টারটির নাম ব্যথার দান। বাসগুলোরও নামকরণ করা হয়েছে কবির সাহিত্যকর্মের নামে। রয়েছে জয় বাংলা, বঙ্গবন্ধু ও নজরুল ভাষ্কর্য। 

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতীচেচুয়া বিল: প্রায় ২০ একর জায়গাজুড়ে বিস্তীর্ণ এ বিলটি। লাল শাপলার ফাঁকে ফাঁকে হঠাৎ দেখা মেলে সাদা ও বেগুনি শাপলা। সঙ্গে ভাসমান কচু ফুলের সাদা আভা এখানকার সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ। প্রকৃতির এই সম্মোহনী রূপ যেকোনো প্রকৃতিপ্রেমীর মনে দোলা দিয়ে যায় মূহুর্তেই। পুরো বিলের বুকজুড়ে মৌসুমের সময় লাল শাপলার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।  শিশির ভেজা রোদমাখা সকালের জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরঙের শাপলার বাহারি রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।

নজরুলের স্মৃতিধন্য ত্রিশালের ঐতিহ্য ও সৌন্দর্য দেখার আমন্ত্রণ। ছবি: দৈনিক প্রভাতীত্রিশালে যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে রেলপথ ও সড়কপথ দুই উপায়েই যাওয়া যায় ত্রিশালে। রেলপথে আসলে ১৬০-২৫০ টাকা খরচ হবে। ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে লোকাল বাস বা সিএনজিতে ত্রিশালে আসতে পারবেন। সড়কপথে ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি ত্রিশাল আসা যায়। ভাড়া লাগবে ২৫০-৩৫০ টাকা। 

Provaati
    দৈনিক প্রভাতী
    এই বিভাগের আরো খবর